জীববিজ্ঞান তথ্য ভাণ্ডার
আপনার জিজ্ঞাসিত সকল তথ্যের সুন্দর সংকলন
ছত্রাক (Fungi) এবং শৈবাল (Algae)
ছত্রাক (Fungi) এবং শৈবালের (Algae) বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কিত তথ্যগুলি এখানে তুলে ধরা হলো:
ছত্রাক (Fungi)
১. বৈশিষ্ট্য (Characteristics)
- ছত্রাক হলো ইউক্যারিওটিক জীব, যা ফাংগি কিংডমের (Kingdom Fungi) অন্তর্ভুক্ত।
- দেহ গঠন: ছত্রাকের দৈহিক অংশকে মাইসেলিয়াম (Mycelium) বলা হয়।
- কোষ প্রাচীর: ছত্রাকের কোষ প্রাচীরের প্রধান উপাদান হলো কাইটিন (Chitin)।
- পুষ্টি: এরা হলো পরজীবী (Parasitic) বা মৃতজীবী (Saprophytic), অর্থাৎ এরা পরভোজী (Heterotrophic)। এদের দেহে ক্লোরোফিলের অনুপস্থিতি থাকে।
- সংরক্ষিত খাদ্য: ছত্রাকের সংরক্ষিত খাদ্য উপাদান হলো গ্লাইকোজেন (Glycogen)।
- জনন: এদের জনন যৌন (Sexual) বা অযৌন (Asexual) উভয় পদ্ধতিতেই হতে পারে।
- অধ্যয়ন: ছত্রাক সম্পর্কিত অধ্যয়নকে মাইকোলজি (Mycology) বলা হয়।
২. অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance)
উপকারিতা (Benefits)
- অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন: পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক Penicillium নামক ছত্রাক থেকে তৈরি করা হয়।
- খাদ্য হিসেবে ব্যবহার: কিছু ছত্রাক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেমন— Agaricus এবং Volvarella।
- ফার্মেন্টেশন (গাঁজন): ইস্ট (Yeast), যেমন Saccharomyces, গাঁজন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়।
- ঔষধ উৎপাদন: Claviceps purpurea থেকে Ergot তৈরি করা হয়।
- মাইকোরাইজা গঠন: ছত্রাক শিকড়ের সাথে যুক্ত হয়ে মাইকোরাইজা (Mycorrhiza) গঠন করে।
অপকারিতা (Harmful Effects)
- রোগ সৃষ্টি: ছত্রাক মানুষ ও উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। যেমন, মানুষের ত্বকের রোগ দাদ (Ringworm/Dermatitis) ছত্রাকের কারণে হয়।
- দাদ সৃষ্টিকারী কয়েকটি ছত্রাক: T. rubrum, M. canis, T. verroceum, এবং Candida albicans।
- উদ্ভিদের রোগ যেমন ব্লাইট (Blight) Alternaria solani বা Phytophthora infestans এর কারণে হয়ে থাকে।
শৈবাল (Algae)
১. বৈশিষ্ট্য (Characteristics)
- শৈবাল হলো সপুষ্পক উদ্ভিদের (Phanerogams) একটি উপবিভাগ, যা ক্রিপটোগ্যামিয়ার (Cryptogamia) অন্তর্ভুক্ত।
- অধ্যয়ন: শৈবাল সম্পর্কিত অধ্যয়নকে ফাইকোলজি (Phycology) বলা হয়।
- দেহ গঠন: এদের দেহ মূল, কাণ্ড, ও পাতায় বিভক্ত নয়, একে থ্যালাস (Thallus) বলা হয়।
- পুষ্টি: শৈবালেরা হলো স্বভোজী (Autotrophic), কারণ এদের দেহে ক্লোরোফিল থাকে এবং এরা সালোকসংশ্লেষণে সক্ষম।
- আবাসস্থল: সাধারণত এরা জলে জন্মায়।
- জনন: শৈবালের প্রজনন রাইজয়েড, টিউবার, খন্ডায়ন (Fragmentation) বা স্পোর (Spore) এর মাধ্যমে হতে পারে।
- সংরক্ষিত খাদ্য: সবুজ শৈবাল (Chlorophyta) শ্বেতসার (Starch) সঞ্চয় করে। বাদামি শৈবাল (Phaeophyta) ম্যানিটল (Mannitol), ল্যামিনারিন (Laminarin) এবং অ্যালজিন (Algin) সঞ্চয় করে। লোহিত শৈবাল (Rhodophyta) ফ্লোরিডিয়ান শ্বেতসার (Floridean starch), আগার (Agar) এবং ক্যারাজিনান (Carageenan) সঞ্চয় করে।
- উদাহরণ: Chlamydomonas একটি এককোষী শৈবাল।
২. অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance)
উপকারিতা (Benefits)
- আগার-আগার উৎপাদন: লোহিত শৈবাল (Rhodophyta) থেকে আগার-আগার নামক পদার্থ পাওয়া যায়।
- অ্যালজিন ও ল্যামিনারিন: বাদামি শৈবাল (Phaeophyta) থেকে অ্যালজিন ও ল্যামিনারিন পাওয়া যায়।
- জৈব জ্বালানি: Botryococcus braunii এবং Chlorella এর মতো কিছু শৈবাল দ্বিতীয় প্রজন্মের জৈব জ্বালানি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
- অক্সিজেন সরবরাহ: শৈবালেরা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন (O2) উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অপকারিতা (Harmful Effects)
- জল দূষণ: কিছু শৈবাল (যেমন: Anabaena, Microcystis, Nostoc) বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে, যা জলজ উদ্ভিদের উপরে বৃদ্ধি পেয়ে জলস্ফীতি (Water Bloom) ঘটায়।
ভাইরাস (Virus)
ভাইরাস (Virus) সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ এবং উদ্ভিদ ও মানুষের মধ্যে সৃষ্ট ভাইরাসজনিত রোগগুলি নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Virus)
- ভাইরাস হলো এমন এক প্রকার আণুবীক্ষণিক জীব, যা জীবন্ত কোষের (host cell) অভ্যন্তরে প্রবেশ না করলে জড় পদার্থের মতো আচরণ করে।
- কোষীয় গঠন নেই: ভাইরাস হলো একটি কোষবিহীন (cell structureless) সত্তা।
- পরজীবী প্রকৃতি: এগুলি বাধ্যতামূলক অন্তঃকোষীয় পরজীবী (Obligate intracellular parasite)।
- রাসায়নিক গঠন: ভাইরাসের দেহে নিউক্লিক এসিড (DNA বা RNA) এবং তার চারপাশে প্রোটিন নির্মিত একটি আবরণ বা ক্যাপসিড (Capsid) থাকে।
- স্ফটিককরণ: ১৯৩৫ সালে ডব্লিউ.এম. স্ট্যানলি (W.M. Stanley) টোব্যাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV)-কে স্ফটিকাকারে তৈরি করতে সক্ষম হন।
- আবিষ্কার: Dmitry Ivanovsky ১৮৯২ সালে ভাইরাস আবিষ্কার করেন।
- আকার: ভাইরাসের আকার সাধারণত ১০ থেকে ৩০০ ন্যানোমিটার (nm) পর্যন্ত হয়।
২. ভাইরাসের উদাহরণ এবং প্রকারভেদ (Examples and Types)
নিউক্লিক এসিড অনুসারে প্রকারভেদ
| প্রকার | নিউক্লিক এসিড | উদাহরণ |
|---|---|---|
| DNA ভাইরাস | ডিএনএ (DNA) | T-ফাজ (T2, T4, T6), ভ্যারিওলা (Variola), হার্পিস (Herpes), হেপাটাইটিস-বি (HBV), TIV, ϕX174, M13 |
| RNA ভাইরাস | আরএনএ (RNA) | TMV (Tobacco Mosaic Virus), HIV, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও, র্যাবিস, Mumps, Reo-virus, হেপাটাইটিস-এ/সি/ডি/ই, SARS-CoV-2 |
আকৃতি অনুসারে উদাহরণ
- দণ্ডাকার (Rod/Helical): TMV (টোব্যাকো মোজাইক ভাইরাস)
- বহুলাকার (Polyhedral/Icosahedral): TIV, এডিনো (Adeno), পোলিও (Polio)
- ব্যাংগাটি আকার (Tadpole Shaped): T2 ফাজ, T4 ফাজ, T6 ফাজ
- গোলাকার (Spherical): HIV, পোলিও
- ডিম্বাকার (Oval): ইনফ্লুয়েঞ্জা
- পাউডারকট আকার (Pox-like shape): Vaccinia ভাইরাস
৩. ভাইরাস সৃষ্ট রোগ (Diseases Caused by Viruses)
ক. মানুষের ভাইরাসজনিত রোগ (Human Viral Diseases)
| রোগের নাম | ভাইরাসের নাম | রোগের প্রকৃতি |
|---|---|---|
| এইডস (AIDS) | HIV (Human Immunodeficiency Virus) | যৌন সংক্রামক রোগ (Sexually Transmitted Disease) |
| COVID-19 | SARS-CoV-2 | RNA ভাইরাসজনিত রোগ যা মহামারি (Pandemic) সৃষ্টি করে |
| হাম (Measles) | Morbili virus | শিশুদের EPI টিকা কর্মসূচির অন্তর্গত রোগ |
| বসন্ত (Smallpox) | Variola virus | এটি DNA ভাইরাস |
| পোলিও | Polio virus | EPI কর্মসূচির অন্তর্গত (OPV টিকা দেওয়া হয়) |
| জলাতঙ্ক (Rabies) | Rabies virus | - |
| জন্ডিস/হেপাটাইটিস | Hepatitis viruses (A, B, C, D, E) | HBV একটি DNA ভাইরাস, বাকিগুলি RNA ভাইরাস |
| ইনফ্লুয়েঞ্জা | Influenza virus | - |
| ডেঙ্গু জ্বর | Flavi virus (DENV-1, 2, 3, 4) | অপর নাম ব্রেকিং বোন ফিভার (Breaking bone fever) |
| সার্স (SARS) | Severe Acute Respiratory Syndrome | - |
| সাধারণ ঠান্ডা | Rhino virus | - |
| উদীয়মান রোগ | Zika, Nipah, Ebola | - |
খ. উদ্ভিদের ভাইরাসজনিত রোগ (Plant Viral Diseases)
- টোব্যাকো মোজাইক রোগ (Tobacco Mosaic Disease): এটি TMV দ্বারা সৃষ্ট।
- আলুর পাতা কোঁকড়ানো রোগ (Potato Leaf Roll)
- টমেটো মোজাইক রোগ (Tomato Mosaic)
- হলুদ শিরা মোজাইক (Yellow Vein Mosaic)
নগ্নবীজী (Gymnosperms) ও আবৃতবীজী (Angiosperms)
নগ্নবীজী এবং আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য, অমরাবিন্যাস, পুষ্পপত্রবিন্যাস, পুষ্প এবং ফলের উদাহরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা:
১. বৈশিষ্ট্য (Characteristics)
| বৈশিষ্ট্য | নগ্নবীজী উদ্ভিদ (Gymnosperms) | আবৃতবীজী উদ্ভিদ (Angiosperms) |
|---|---|---|
| বীজ | বীজগুলি অনাবৃত থাকে, অর্থাৎ বীজ ডিম্বাশয় প্রাচীর দ্বারা আবৃত থাকে না। | বীজগুলি আবৃত থাকে, অর্থাৎ ডিম্বাশয় প্রাচীর থেকে উৎপন্ন ফলের মধ্যে বীজ থাকে। |
| ডিম্বাশয় (Ovary) | ডিম্বাশয় অনুপস্থিত। | ডিম্বাশয় উপস্থিত। |
| ফুল ও ফল | এরা সত্যিকারের ফুল ও ফল উৎপাদন করে না। এদের জনন অঙ্গ কোণ (Cone) বা স্ট্রবিলাস। | এদের ফুল হয় এবং এরা ফল উৎপাদন করে। |
| নিষেক | সাধারণত একক নিষেক ঘটে। | দ্বিনিষেক (Double fertilization) ঘটে। |
| শস্য (Endosperm) | নিষেক-পূর্ববর্তী, তাই এটি হ্যাপ্লয়েড (n)। | নিষেক-পরবর্তী, তাই এটি ট্রিপ্লয়েড (3n)। |
| জাইলেম কলা | জাইলেম কলায় সাধারণত ভেসেল (vessel) অনুপস্থিত থাকে। | জাইলেম কলায় ভেসেল উপস্থিত থাকে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)। |
আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্রকারভেদ
- একবীজপত্রী: বীজে একটি মাত্র বীজপত্র, পাতায় সমান্তরাল শিরাবিন্যাস, গুচ্ছ মূল। উদাহরণ: ধান, গম, ভুট্টা।
- দ্বিবীজপত্রী: বীজে দুটি বীজপত্র, পাতায় জালিকা শিরাবিন্যাস, প্রধান মূল। উদাহরণ: আম, জবা।
২. অমরাবিন্যাস (Placentation)
ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরে ডিম্বক বা ডিম্বকগুলি (Ovule) যে বিশেষ বিন্যাসে অমরা বা প্লাসেন্টার (Placenta) উপরে সাজানো থাকে, সেই বিন্যাস।
| অমরাবিন্যাসের নাম | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ |
|---|---|---|
| প্রান্তীয় (Marginal) | এক বা একাধিক গর্ভপত্রবিশিষ্ট ডিম্বাশয়ের প্রান্তের দিকে ডিম্বকগুলি বিন্যস্ত থাকে। | মটর, সিম, ছোলা (Leguminosae গোত্র) |
| অক্ষীয় (Axile) | ডিম্বকগুলি ডিম্বাশয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত অক্ষের চারপাশে বিন্যস্ত থাকে। | জবা, টমেটো, লেবু, ধুতুরা |
| পার্শ্বীয় (Parietal) | ডিম্বকগুলি ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরীণ প্রাচীর বা পর্দার উপরে সজ্জিত থাকে। | সর্ষে, পেঁপে, ঝিঙ্গা, লাউ |
| মুক্ত কেন্দ্রীয় (Free Central) | ডিম্বকগুলি ডিম্বাশয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি স্তম্ভের চারপাশে বিন্যস্ত থাকে। | নারিকেল |
| মূলীয় (Basal) | সাধারণত ডিম্বাশয়ের তলা থেকে একটি মাত্র ডিম্বক উৎপন্ন হয়। | ধান, গম, সূর্যমুখী |
| পৃষ্ঠীয় (Superficial) | ডিম্বকগুলি ডিম্বাশয়ের অভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠের উপরে একাধিক প্রকোষ্ঠে উৎপন্ন হয়। | শাপলা |
৩. পুষ্পপত্রবিন্যাস (Aestivation)
পুষ্পপত্রবিন্যাস হলো ফুলের কুঁড়িতে (Floral bud) ফুলের বৃত্তি (Calyx) বা দলমণ্ডল (Corolla)-এর সদস্যদের সাজানো পদ্ধতি। এটি সাধারণত Valvate (প্রান্তস্পর্শী), Twisted (পাকানো), Imbricate (ইমব্রিকেট) এবং Quincuncial (কুইনকানসিয়াল) হতে পারে।
৪. পুষ্প এবং ফল উদাহরণ (Flower and Fruit Examples)
পুষ্প (Flower)
- নগ্নবীজী উদ্ভিদ: এদের পুষ্পের পরিবর্তে কোণ (cone) থাকে।
- আবৃতবীজী উদ্ভিদ: উভলিঙ্গ পুষ্প (যেমন জবা) বা একলিঙ্গ পুষ্প (যেমন লাউ, কুমড়া) থাকতে পারে।
ফল (Fruit)
- নগ্নবীজী উদ্ভিদ: ডিম্বাশয় না থাকায় এদের ক্ষেত্রে ফল গঠিত হয় না।
- আবৃতবীজী উদ্ভিদ: প্রকৃত ফল (আম, পেঁপে) বা মিথ্যা ফল (আপেল, চালতা) হতে পারে।
গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis) ও ক্রেবস চক্র (Krebs Cycle)
গ্লাইকোলাইসিস এবং ক্রেবস চক্র—এই দুটি প্রক্রিয়া হলো জীবদেহের শ্বসন (Respiration) প্রক্রিয়ার প্রধান অংশ।
১. গ্লাইকোলাইসিস (Glycolysis)
- এটি সবাত (aerobic) ও অবাত (anaerobic) শ্বসন উভয়েরই প্রথম পর্যায়।
- এই প্রক্রিয়াটি EMP (Embden-Meyerhof-Parnas) পথ নামেও পরিচিত।
- সংঘটন স্থান: কোশের সাইটোপ্লাজমে (Cytoplasm) সংঘটিত হয়।
- প্রক্রিয়া ও উৎপাদন: ১ অণু গ্লুকোজ ভেঙে ২ অণু পাইরুভিক অ্যাসিড (Pyruvic acid) উৎপন্ন হয়।
- এই প্রক্রিয়ায় মোট ২ অণু ATP নিট উৎপাদন হয় এবং ২ অণু NADH উৎপন্ন হয়।
২. ক্রেবস চক্র (Krebs Cycle)
- এটি সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।
- এটি সাইট্রিক অ্যাসিড চক্র (Citric acid cycle) বা TCA চক্র (Tricarboxylic acid cycle) নামেও পরিচিত।
- সংঘটন স্থান: ইউক্যারিওটিক কোশের মাইটোবন্ড্রিয়ায় (Mitochondria) সংঘটিত হয়।
- প্রক্রিয়া: গ্লাইকোলাইসিসে উৎপন্ন পাইরুভিক অ্যাসিড প্রথমে জারিত হয়ে অ্যাসিটাইল CoA (Acetyl CoA) তৈরি করে, যা ক্রেবস চক্রে প্রবেশ করে।
- উৎপাদিত পদার্থ: ATP বা GTP, NADH, FADH2 এবং CO2 উৎপন্ন হয়।
ইনসুলিন (Insulin) ও ইন্টারফেরন (Interferon)
ইনসুলিন (Insulin)
১. ইনসুলিনের পরিচয় ও কাজ
- ইনসুলিন হলো একটি হরমোন যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে।
- গঠন: ইনসুলিন A এবং B নামক দুটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল দিয়ে গঠিত, যা ডাই-সালফাইড বন্ধনী (S-S বন্ধনী) দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
- অ্যামিনো অ্যাসিড সংখ্যা: মানব ইনসুলিন মোট ৫১টি অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত (A শৃঙ্খলে ২১টি এবং B শৃঙ্খলে ৩০টি)।
২. উৎপাদন ও ব্যবহার (জৈবপ্রযুক্তি)
- প্রকৃতি: ইনসুলিন একটি প্রোটিন।
- জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার: জিন প্রকৌশল (Gene Engineering) পদ্ধতির মাধ্যমে E. coli ব্যাকটেরিয়ার প্লাসমিডে জিন প্রবেশ করিয়ে মানব ইনসুলিন উৎপাদন করা সম্ভব।
- উৎপাদনকারী সংস্থা: ইল্লাই লিলি অ্যান্ড কোম্পানি (Eli Lilly and Company) হলো প্রথম সংস্থা (১৯৮২)।
ইন্টারফেরন (Interferon)
১. ইন্টারফেরনের পরিচয় ও কাজ
- সংজ্ঞা: ইন্টারফেরন হলো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোশ থেকে নিঃসৃত এক প্রকার গ্লাইকোপ্রোটিন (Glucoprotein)।
- কার্যকারিতা: এটি সংলগ্ন অনাক্রান্ত কোশগুলোকে ভাইরাস আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- ব্যবহার: ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
২. আবিষ্কার ও উৎপাদন
- আবিষ্কারক: ১৯৫৭ সালে আলেক আইজ্যাকস (Alec Isaacs) এবং জীন লিন্ডেম্যান (Jean Lindemann)।
- উৎপাদনকারী জীব: Saccharomyces cerevisiae ব্যবহার করে ইন্টারফেরন তৈরি করা হয়।
টিকা (Vaccine) ও অ্যান্টিবডি (Antibody)
১. টিকা (Vaccine)
টিকা হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য ব্যবহৃত জৈব উপাদান, যা প্রধানত মৃত, দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় জীবাণু বা জীবাণুর অংশবিশেষ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।
ক. টিকাদান কর্মসূচি (EPI)
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (EPI) এর আওতায় ৬টি প্রধান রোগের টিকা দেওয়া হয়: ডিপথেরিয়া (D), পারটুসিস (P), টিটেনাস (T), হাম (M), পোলিও (P), এবং যক্ষ্মা (T) (B.C.G)।
খ. টিকার প্রকারভেদ
| প্রকারভেদ | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ |
|---|---|---|
| মৃত বা নিষ্ক্রিয় টিকা | সম্পূর্ণ জীবাণুটিকে মেরে বা নিষ্ক্রিয় করে তৈরি করা হয়। | পোলিও (IPV), রেবিস, কলেরা, হেপাটাইটিস A, সিনোফার্ম |
| জীবিত দুর্বল টিকা | জীবিত কিন্তু দুর্বল বা তেজ হ্রাসপ্রাপ্ত জীবাণু ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। | বিসিজি (BCG), হাম, মামস, রুবেলা, জলবসন্ত |
| টক্সয়েড টিকা | ব্যাকটেরিয়ার বিষ (toxin) নিষ্ক্রিয় করে তৈরি করা হয়। | ডিপথেরিয়া এবং টিটেনাস |
| সাব-ইউনিট টিকা | জীবাণুর অংশ বা সাব-ইউনিট (যেমন—প্রোটিন) ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। | হেপাটাইটিস বি (HBsAg), নভোভ্যাক্স |
| mRNA টিকা | জিনের নির্দেশনা বহনকারী mRNA ব্যবহার করে। | মডার্না এবং ফাইজার কোভিড-১৯ টিকা |
২. অ্যান্টিবডি (Antibody)
অ্যান্টিবডি হলো এক প্রকার গামা (γ) গ্লোবিউলিন যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune System) গড়ে তোলে। অ্যান্টিবডিগুলি ইমিউনোগ্লোবুলিন (Immunoglobulin or Ig) নামেও পরিচিত।
ক. অ্যান্টিবডির প্রকারভেদ
| অ্যান্টিবডি | মোট অ্যান্টিবডির শতাংশ | প্রধান বৈশিষ্ট্য |
|---|---|---|
| IgG | প্রায় ৭৫% | সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম, প্লাসেন্টা অতিক্রম করে, সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। |
| IgA | প্রায় ১২% | লালা, অশ্রু, স্তনদুগ্ধের মতো ক্ষরণে পাওয়া যায়, স্থানীয় প্রতিরক্ষা প্রদান করে। |
| IgM | - | সবচেয়ে বৃহৎ, প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ায় (Primary Immune Response) প্রথমে উৎপন্ন হয়। |
| IgD | প্রায় ১% | B লিম্ফোসাইটের পৃষ্ঠে থাকে। |
| IgE | প্রায় ০.০২-০.১% | অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রদাহ (inflammation)-এর সাথে জড়িত। |
ফটোসিস্টেম ও ফটোফসফোরাইলেশন
উদ্ভিদ শারীরতত্ত্বের (Plant Physiology) গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহৃত ফটোসিস্টেম I (PS-I) ও ফটোসিস্টেম II (PS-II) এর পার্থক্য এবং চক্রীয় ও অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশনের তুলনা।
১. ফটোসিস্টেম I (PS-I) ও ফটোসিস্টেম II (PS-II) এর বৈশিষ্ট্য
| বৈশিষ্ট্য | ফটোসিস্টেম I (PS-I) | ফটোসিস্টেম II (PS-II) |
|---|---|---|
| বিক্রিয়া কেন্দ্র | P700 | P680 |
| প্রধান ভূমিকা | চক্রীয় এবং অচক্রীয় উভয় ফটোফসফোরাইলেশনে অংশগ্রহণ করে। | প্রধানত অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশনে অংশগ্রহণ করে। |
| জলের ফটোলাইসিস | জল বিয়োজন (Photolysis of water) এখানে ঘটে না। | জলের বিয়োজন (H2O ভেঙে O2, H+ ও ইলেকট্রন তৈরি হয়) এই সিস্টেমে ঘটে। |
| ইলেকট্রন দাতা | PS-II থেকে আগত ইলেকট্রন (Plastocyanin) থেকে গ্রহণ করে। | জলের ফটোলাইসিস থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করে। |
২. চক্রীয় ও অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশনের তুলনা
| পার্থক্যসূচক | চক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন | অচক্রীয় ফটোফসফোরাইলেশন |
|---|---|---|
| অংশগ্রহণকারী ফটোসিস্টেম | শুধুমাত্র PS-I অংশগ্রহণ করে। | PS-I এবং PS-II উভয়ই অংশগ্রহণ করে। |
| উৎপাদিত বস্তু | শুধুমাত্র ATP উৎপন্ন হয়। | ATP এবং NADPH (বা NADPH+H+) উভয়ই উৎপন্ন হয়। |
| জলের প্রয়োজন | জলের প্রয়োজন নেই, ফটোলাইসিস হয় না। | জলের প্রয়োজন হয় (ফটোলাইসিস ঘটে)। |
| NADPH গঠন | NADPH গঠিত হয় না। | NADPH গঠিত হয়। |
| ইলেকট্রন প্রবাহের গতিপথ | ইলেকট্রন PS-I থেকে শুরু হয়ে আবার PS-I এই ফিরে আসে (চক্রাকারে)। | ইলেকট্রন PS-II থেকে শুরু হয়ে PS-I এর মাধ্যমে NADPH এর কাছে পৌঁছায় (অচক্রীয় পথ)। |
| O2 মুক্তি | O2 মুক্ত হয় না। | O2 মুক্ত হয়। |
| সংঘটন স্থান | ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা ল্যামেলি-তে ঘটে। | ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েডের মেমব্রেনে ঘটে। |
কোষ বিভাজন (Cell Division)
কোষ বিভাজন সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ছক/তুলনা: কোষ চক্রের সময় বিভাজন এবং মাইটোসিস ও মিয়োসিসের পার্থক্য।
১. কোষ চক্রের পর্যায় এবং সময়কাল (Phases of Cell Cycle)
| কোষ চক্রের দশা | মোট সময়ের শতাংশ | অন্তর্ভুক্ত পর্যায়/দশা |
|---|---|---|
| ইন্টারফেজ (Interphase) | ৯০-৯৫% | G1 দশা (Gap 1) (৩০-৪০%) |
| S দশা (Synthesis) (৩০-৫০%) | ||
| G2 দশা (Gap 2) (১০-২০%) | ||
| মাইটোসিস দশা (M Phase) | ৫-১০% | প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ, টেলোফেজ |
ইন্টারফেজ: কোষ চক্রের যে দশায় কোষ বিভাজনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এই দশাতেই DNA সংশ্লেষণ (S দশা) ঘটে।
২. মাইটোসিস বনাম মিয়োসিস (Mitosis vs. Meiosis)
| পার্থক্যসূচক | মাইটোসিস (Mitosis) | মিয়োসিস (Meiosis) |
|---|---|---|
| কোষের প্রকার | দেহকোষে (Somatic cells) ঘটে। | জনন মাতৃকোষে (Germ cells) ঘটে। |
| অপত্য কোষের সংখ্যা | ১টি মাতৃকোষ থেকে ২টি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়। | ১টি মাতৃকোষ থেকে ৪টি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়। |
| ক্রোমোজোম সংখ্যা | অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান (২n) থাকে। | অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক (n) হয়। |
| ক্রসিং ওভার | সাধারণত ক্রসিং ওভার ঘটে না। | ক্রসিং ওভার (Crossing over) ঘটে (প্যাকাইটিন উপ-পর্যায়ে)। |
| তাৎপর্য | দেহের বৃদ্ধি, ক্ষত মেরামত এবং অযৌন জননে সাহায্য করে। | জনন কোষ সৃষ্টি এবং প্রজাতির মধ্যে প্রকরণ (Variation) সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। |
কৃত্রিম প্রজনন (Artificial Propagation)
কৃত্রিম প্রজনন বা বংশবিস্তার বা এর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণগুলি নিচে দেওয়া হলো:
ক. উদ্ভিদ প্রজনন/বংশবিস্তার সম্পর্কিত উদাহরণ
- কৃত্রিম সঙ্করীকরণ (Artificial Hybridization): দুটি ভিন্ন প্রজাতি বা প্রকারের মধ্যে বংশানুক্রমিক উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নতুন সংকর জাত (Hybrid variety) তৈরির প্রক্রিয়া। উদাহরণ: কুফরি সিন্দুরি, পূসা লাল।
- টিস্যু কালচার (Tissue Culture) ও মাইক্রোপ্রোপাগেশন: জীবাণুমুক্ত মাধ্যমে কোষ, টিস্যু বা অঙ্গের কালচার করার পদ্ধতি। মাইক্রোপ্রোপাগেশন হলো টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উদ্ভিদের ব্যাপক সংখ্যায় বংশবৃদ্ধি ঘটানো।
- সাইব্রিড তৈরি (Somatic Hybridization): প্রোটোপ্লাস্ট ফিউশন ঘটিয়ে সাইব্রিড (Cybrid) তৈরি করা।
- চিরায়ত অঙ্গজ বংশবিস্তার পদ্ধতি: জোড় কলম (Grafting), শাখা কলম (Cutting), এবং গুটি কলম (Layering) বা বডিং (Budding)।
- কৃত্রিম পার্থেনোজেনেসিস (Artificial Parthenogenesis): নিষেক ছাড়াই ডিম্বাণু থেকে ভ্রূণ তৈরি।
খ. জীব প্রযুক্তি/জেনেটিক্স সম্পর্কিত উদাহরণ
- রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ প্রযুক্তি: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ টেকনোলজির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে জিন পরিবর্তন করে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি করা।
- কৃত্রিম ইনসুলিন উৎপাদন: রিকম্বিন্যান্ট ডিএনএ টেকনোলজির মাধ্যমে মানব ইনসুলিন (হিউমুলিন) E. coli ব্যাকটেরিয়ার প্লাসমিডে জিন প্রবেশ করিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়।
সাইনুসাইটিস (Sinusitis)
সাইনুসাইটিস রোগটি সাইনাস (Sinuses) এর প্রদাহের সাথে সম্পর্কিত। মানুষের বিভিন্ন সাইনাসের অবস্থান নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ফ্রন্টাল সাইনাস (Frontal Sinus)
- এথময়েড সাইনাস (Ethmoid Sinus)
- স্ফেনয়েড সাইনাস (Sphenoid Sinus)
- ম্যাক্সিলারি সাইনাস (Maxillary Sinus)
প্রদত্ত উৎসগুলোতে সাইনুসাইটিস (Sinusitis) রোগের সংজ্ঞা বা লক্ষণ সম্পর্কে সরাসরি কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি, শুধুমাত্র সাইনাসগুলোর অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাইরাস গঠিত রোগ এর ছক (Virus-Caused Diseases)
ভাইরাস গঠিত রোগগুলির একটি বিস্তারিত ছক নিচে দেওয়া হলো, যেখানে মানুষ ও উদ্ভিদের রোগগুলি এবং সংশ্লিষ্ট ভাইরাস বা ভাইরাসের প্রকারভেদ উল্লেখ করা হয়েছে।
ক. মানুষের ভাইরাসজনিত রোগসমূহ
| রোগের নাম | ভাইরাসের নাম / প্রকারভেদ | নিউক্লিক এসিড |
|---|---|---|
| AIDS | HIV (Human Immunodeficiency Virus) | RNA ভাইরাস |
| COVID-19 | SARS-CoV-2 | RNA |
| হাম (Measles) | রুবেলা (Rubella) / Morbili virus | - |
| বসন্ত (Smallpox) | ভেরিওলা (Variola) ভাইরাস | - |
| চিকেন পক্স (Chicken Pox) | ভ্যারিসেলা-জোস্টার (Varicella-Zoster) ভাইরাস | - |
| পোলিও | পোলিও (Polio) ভাইরাস | RNA ভাইরাস |
| ইনফ্লুয়েঞ্জা | ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza) ভাইরাস | RNA ভাইরাস |
| জলাতঙ্ক (Rabies) | রেবিস (Rabies) ভাইরাস | RNA ভাইরাস |
| মামস (Mumps) | মাম্পস (Mumps) ভাইরাস | RNA ভাইরাস |
| ডেঙ্গু জ্বর | ফ্লাভি (Flavi) ভাইরাস (DENV-1, 2, 3, 4) | RNA ভাইরাস |
| হার্পিস (Herpes) | হার্পিস (Herpes) ভাইরাস | DNA ভাইরাস |
| হেপাটাইটিস বি | হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B) ভাইরাস | DNA ভাইরাস |
| হেপাটাইটিস এ/সি/ডি/ই | হেপাটাইটিস এ/সি/ডি/ই ভাইরাস | RNA ভাইরাস |
খ. উদ্ভিদের ভাইরাসজনিত রোগসমূহ
| রোগের নাম | ভাইরাসের নাম / প্রকারভেদ | নিউক্লিক এসিড |
|---|---|---|
| তামাক মোজাইক রোগ | টোব্যাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV) | RNA ভাইরাস |
| আলুর পাতা কোঁকড়ানো রোগ | - | - |
| টমেটো মোজাইক রোগ | টমেটো মোজাইক ভাইরাস | - |
| ধানের টুংরো রোগ | - | - |
পার্থেনোকার্পি (Parthenocarpy)
পার্থেনোকার্পি (Parthenocarpy) সম্পর্কিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
১. সংজ্ঞা ও প্রকৃতি
- পার্থেনোকার্পি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে নিষেক ছাড়াই ফল সৃষ্টি হয়।
- এই প্রক্রিয়াটিকে পার্থেনোকার্পেসিস (Parthenocarposis) নামেও অভিহিত করা হয়।
২. ফলাফল
- পার্থেনোকার্পির ফলে যে ফল তৈরি হয়, তা সাধারণত বীজবিহীন ফল (Seedless fruit) হয়।
- এই ধরনের ফলে সুস্থ বীজ (healthy seeds) থাকে না।
- আবৃতবীজী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বীজবিহীন ফল সৃষ্টি হওয়া একটি উদাহরণ।
প্রোটিনের প্রকারভেদ (Types of Protein)
প্রোটিনকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়: সরল প্রোটিন, সংযোজী প্রোটিন এবং উৎপন্ন প্রোটিন।
১. সরল প্রোটিন (Simple Protein)
যেসব প্রোটিন শুধুমাত্র অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা গঠিত।
- প্রোটামিন: ক্ষুদ্রতম সরল প্রোটিন।
- প্রোলামিন: প্রোলিন ও গ্লুটামিন সমন্বিত।
- অ্যালবুমিন: জল ও লঘু দ্রবণে দ্রবণীয়।
- গ্লোবিউলিন: লবণ দ্রবণে দ্রবণীয়।
- হিস্টোন: ক্ষারীয় প্রোটিন।
- স্ক্লেরোপ্রোটিন: প্রাণীদেহের গাঠনিক প্রোটিন (যেমন—কোলাজেন, গ্লুটেন)।
২. সংযোজী প্রোটিন (Conjugated Protein)
প্রোটিন অংশ এবং অপ্রোটিন অংশ (পোস্থেটিক গ্রুপ) যুক্ত হয়ে গঠিত হয়।
| প্রোটিনের নাম | অপ্রোটিন অংশের প্রকারভেদ | উদাহরণ |
|---|---|---|
| নিউক্লিওপ্রোটিন | নিউক্লিক অ্যাসিড | - |
| গ্লাইকোপ্রোটিন | শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট | - |
| লাইপোপ্রোটিন | লিপিড বা চর্বি | - |
| ক্রোমোপ্রোটিন | রঙিন পদার্থ | হিমোগ্লোবিন, ক্লোরোফিল |
| মেটালোপ্রোটিন | ধাতু (Fe, Co, Mg, Mn, Cu) | - |
| ফসফোপ্রোটিন | ফসফোরিক অ্যাসিড | ক্যাসিন, ভিটিলিন |
৩. উৎপন্ন প্রোটিন (Derived Protein)
সরল বা সংযোজী প্রোটিনের আংশিক বিশ্লেষণ বা ভাঙনের ফলে তৈরি হয়।
- উদাহরণ: পেপটন, প্রোটিওজ, ফাইব্রিন।
৪. প্লাজমা প্রোটিন (Plasma Protein)
রক্তের প্লাজমায় পাওয়া যায় এমন প্রোটিন:
- গ্লোবিউলিন
- প্রোথ্রোমবিন
- অ্যালবুমিন
- ফাইব্রিনোজেন
লিপিডের প্রকারভেদ (Types of Lipid)
লিপিড (Lipids) হলো ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লিসারলের এস্টার। লিপিডকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়:
১. সরল লিপিড (Simple Lipids)
- চর্বি বা ফ্যাট (Fat): গ্লিসারল এবং তিন অণু ফ্যাটি অ্যাসিডের এস্টার (ট্রাইগ্লিসারাইড)।
- মোম (Wax): ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যালকোহলের (গ্লিসারল ব্যতীত) এস্টার।
২. যৌগিক লিপিড (Compound Lipids)
লিপিড যা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যালকোহল ছাড়াও অন্য কোনো গ্রুপ বহন করে।
-
ফসফোলিপিড: ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্লিসারল এবং ফসফরাস গ্রুপ সমন্বিত।
- উদাহরণ: লেসিথিন, সেফালিন।
- কাজ: কোশের ঝিল্লি (cell membrane) গঠনে ভূমিকা পালন করে।
-
লাইপোপ্রোটিন: প্রোটিন এবং লিপিডের যৌগ। রক্তে কোলেস্টেরল পরিবহন করে।
- HDL (High Density Lipoprotein): ‘ভালো কোলেস্টেরল’।
- LDL (Low Density Lipoprotein): ‘খারাপ কোলেস্টেরল’।
- VLDL (Very Low-density Lipoprotein)
- কাইলোমাইক্রন (Chylomicron)
৩. উৎপন্ন বা ব্যুৎপন্ন লিপিড (Derived Lipids)
সরল বা যৌগিক লিপিডের হাইড্রোলাইসিস থেকে উৎপন্ন হয়।
- স্টেরয়েডস (Steroids): উদাহরণ: কোলেস্টেরল, ভিটামিন ডি, পিত্ত এসিড।
- টেরপিনস (Terpenes): উদাহরণ: বিটা ক্যারোটিন।
ইন সিটু (In situ) ও এক্স সিটু (Ex situ) সংরক্ষণ
ইন সিটু (In situ) এবং এক্স সিটু (Ex situ)—এই দুটি হলো জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) সংরক্ষণের দুটি প্রধান পদ্ধতি।
১. ইন সিটু সংরক্ষণ (In situ Conservation)
- সংজ্ঞা: ইন-সিটু সংরক্ষণ হলো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের একটি কৌশল, যেখানে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীকে তার প্রাকৃতিক বাসস্থানেই রক্ষা করা হয়।
- উদাহরণ:
- বন (Forest)
- ইকো-পার্ক (Eco-park)
- সাফারি পার্ক (Safari park)
- অভয়ারণ্য (Sanctuary)
২. এক্স সিটু সংরক্ষণ (Ex situ Conservation)
- সংজ্ঞা: এটি হলো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের একটি কৌশল, যেখানে কোনো জীবকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে এনে অন্য কোনো সুরক্ষিত বা সংরক্ষিত স্থানে সংরক্ষণ করা হয়।
- উদাহরণ:
- বীজ ব্যাংক (Seed bank): এটি বীজ সংরক্ষণের একটি প্রক্রিয়া।
- বীজ ব্যাংকে বীজগুলিকে প্রায় −20° C তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।